Anweshan by Aniruddha Bose
খুব কাছের মানুষের সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে পক্ষপাতিত্বের একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়।
অনিরুদ্ধ বসু কিংবা তার লেখা সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে আমার পক্ষে এই ফাঁদটি এড়িয়ে চলা মুস্কিল। ফলে এই কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু অনুরধের ঢেঁকি তো গিলতেই হয়। তাই মেডিক্যাল কলেজের প্রথম দিনটি থেকেই যার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব, আজ প্রউড়ত্বের প্রান্তে এসে তার লেখা উপন্যাসটি সম্বন্ধে কলম ধরতে হল।
সিকি শতাব্দীর চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের জীবন সম্বন্ধে নির্মোহ করে দিয়েছে। আমরা সকলেই বুঝতে পারি অনিত্যতাকে, অনিশ্চয়তাকে। খুব কাছ থেকে, জীবনের নানান স্তর থেকে আসা, নানা অলিগলি ঘেরা বহু মানুষকে সম্পূর্ণ মুখোসহীন চেহারায় দেখে দেখে, সব চিকিৎসকেরই একটা নৈর্ব্যক্তিকতা গড়ে ওঠে। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে সিনিক হয়ে যান। আর বিরলতম কয়েকজন হয়ে ওঠেন মানসিকভাবে সন্ন্যাসী। তাই চিকিৎসকদের দৃষ্টিতে দেখা জগতের একটা এক্স-রে দৃষ্টিভঙ্গি থাকেই।
অনিরুদ্ধ ঠিক এই কাজটাই করেছে। আর তা করেছে শল্য-চিকিৎসকের নির্মম ছুরিতে। আমাদের জানা-অজানা, চেনা-অচেনা অনেকগুলি জগতের দরজা খুলে সেখানকার অধিবাসী লোকগুলোর মুখোস ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে দেখাতে চেয়েছে জীবনের গভীর সত্যকে।
উপন্যাসটা পড়তে পড়তে ধাক্কা খেতে হয় তীব্র তীক্ষ্ণ যৌনতায়। বিস্ময় এবং বর্ণনায় এই তীব্র যৌনতা আমাদের পোষকি মনকে হকচকিয়ে দেয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পরশুরামের সেই বিখ্যাত গল্প ‘নির্মোক নৃত্য’-র মতো, একটা সুগভীর জিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় - যৌনতা কী? যৌনতা কোথায়?যৌনতা কি আমাদের অন্তরের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা ‘Propagation of Gene’-এর মাধ্যমে অমরত্ব লাভের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ নয়?
তথাকথিত উচ্চবিত্তসমাজের পঙ্কিলতাকে ঘেঁটে কিছু সোনার টুকরো উদ্ধার করেছে অনিরুদ্ধ। পাঠক নিজেই পুনরাবিষ্কার করবেন - সে সম্বন্ধে কিছু বলে সময় নষ্ট করার কোনও মানেই হয় না।
গল্পের অন্তরালে বয়ে চলে এক অদ্ভুত গাণিতিক ব্যাখ্যা - Venn Diagram of Life. কয়েকটি বিশাল প্রশ্ন হাজির করেছে অনিরুদ্ধ পাঠকের সামনে -আমাদের অস্তিত্ব কতটুকু? আমাদের পারস্পারিক সম্পর্ক এবং আমাদের নিজস্বতা, অস্তিত্ব মধ্যেকার সংঘাতের কারণ কী এবং কোথায়? আমাদের পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিটা কি শুধুই নিরাপত্তা আর ক্ষমতার লালসা? ঘর কাকে বলে? আমাদের সত্যিকারের ঘর কোথায়?
উপন্যাসটির মূল্যায়ন প্রত্যেক পাঠক নিজের জ্ঞান বুদ্ধি মানসিকতার প্যারাডাইম দিয়ে করবেন - এ সম্বন্ধে কোন মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
শুধু ব্যক্তিগত একটা কথা না বলে পারছি না - পাণ্ডুলিপিটা পড়া শেষ হওয়ার পর অনেকক্ষণ ঝাপসা চোখে বসেছিলাম।
অলমিতি!
ডাঃ আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায়
Publications of Aniruddha Bose:
Reviews
Anweshan Promotion
-by You Tube